বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার হত্যা নিয়ে মন্তব্য করায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোকে তলব করে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার সকালে মিয়া সেপ্পোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জাতিসংঘ অনুবিভাগ) মহাপরিচালক নাহিদা সোবহানের দপ্তরে তলব করে এই অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
একই ইস্যুতে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন তাদের ফেসবুক পেজে বিবৃতি দেওয়ায় ১০ অক্টোবর ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনকে ডেকে পাঠিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মিয়া সেপ্পোকে ডেকে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের সমন্বয়কারীর ঢাকা দপ্তর থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটি মোটেও ঠিক হয়নি। কারণ, সরকার এখানে মতপ্রকাশ বা মুক্তচিন্তাকে প্রতিহত করেনি। তা ছাড়া এ বিষয় নিয়ে সরকার ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। যে হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত ও বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকার মনে করে, এটি (বিবৃতি) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। এ ধরনের বিবৃতি দিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা যাবে না।
তাকে আরও জানানো হয়, এ ঘটনায় সরকার এরই মধ্যে খুনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। অতএব এ নিয়ে জাতিসংঘের বিবৃতি অনভিপ্রেত।
এ ছাড়া মিয়া সেপ্পোকে আরও জানানো হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের কোন দেশে যখন শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা ঘটে তখন জাতিসংঘকে কোন মন্তব্য করতে দেখা যায় না। শুধু বাংলাদেশ কোন ঘটনা ঘটলেই তাকে মত প্রকাশের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয় যা যুক্তিসঙ্গত নয়।
৯ অক্টোবর জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, অবাধ মতপ্রকাশের অভিযোগে বুয়েটের এক তরুণ শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ নিন্দা জানাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার না করায় বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সহিংসতায় অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের বাংলাদেশ দপ্তর লক্ষ করছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে স্বাধীন তদন্তকারীরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ বিচারের পথে যাবেন, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার জন্য কাউকে হয়রানি, নির্যাতন ও হত্যা করা উচিত নয়।
ওইদিন কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব টকে অংশ নিয়ে মিয়া সেপ্পো ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করে বলেন, এটি একটি ‘ভীতিকর ঘটনা’। তার নিজের দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে এত নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটতে পারে সেটা তার কল্পনারও বাইরে। এ ঘটনা গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। প্রিয় সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে ক্যাম্পসে নিরাপদ আছে, এ নিশ্চয়তা অবশ্যই বাবা-মাকে দিতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, এর আগে ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারওকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল এবং তার সামনেও একই ধরনের বক্তব্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়।