The news is by your side.

আফগান নারীদের ঘরে আটকে ফেলেছে তালেবান!

২০২২ সালে তালেবান - পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীদের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে

0 122

২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট, তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে যত ধরনের বিধিনিষেধ জারি করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করেছে নারীদের বিষয়ে।

সামগ্রিকভাবে চারটি ক্ষেত্রে মেয়েদের গতিবিধি, ভূমিকা ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করছে তালেবান: রাজনীতি থেকে মেয়েদের সরিয়ে দেওয়া, জনসমক্ষে তাদের চলাফেরা কমিয়ে ফেলা, শিক্ষা নিষিদ্ধ করা এবং কাজের সুযোগ সীমিত করে ফেলা।

২০০১ সালে তালেবানের প্রথম সরকার উৎখাত হওয়ার পর গত দুই দশকে হামিদ কারজাই এবং পরে আশরাফ গনি সরকার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই আফগান নারীরা তাদের ওপর একে একে চাপানো বিধিনিষেধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। অনেক বিক্ষোভে নারীদের মারধর করা হয়। অনেককে কারাগারে অনেকদিন আটকে রাখা হয়। ২০২১ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর হেরাতে নারীদের এমন এক বিক্ষোভে তালেবান গুলি চালালে তিনজন মারা যায়, আহত হয় আরও সাতজন।

পরের দিনই তালেবানের স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক নির্দেশ জারি করে বিক্ষোভের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। জানানো হয়, যে কোনো বিক্ষোভের জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু সেদিনই কাবুলে অনেক নারী বিক্ষোভ করে।

সে বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর কাবুল পৌরসভার নারী কর্মচারীদের জানানো হয়, শুধু তারাই অফিসে আসতে পারবে যাদের কাজগুলো কোনো পুরুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

২০২২ সালের জুন মাস আফগান সিভিল সার্ভিসের নারী কর্মকর্তারা তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তার একমাস পর আফগান অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নারী কর্মীদের জানানো হয়, তাদেরকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং বড়জোর পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য অফিসে গিয়ে তাদের জায়গায় কাজ করতে পারবে।

আফগানিস্তানের প্রথম ও একমাত্র নারী সঙ্গীত গোষ্ঠী জোহরা অর্কেস্ট্রার সদস্যরা পালিয়ে পর্তুগাল গিয়ে আশ্রয় নেয়। তালেবান নতুন করে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আফগান নারীরা কোনো ধরনের খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেনি। কারণ, নারীদের খেলাধুলার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর তালেবান সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক জানান, খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ শুধু অনুচিতই নয়, একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয়। কারণ তার মতে, খেলাধুলো করতে গিয়ে মেয়েদের পক্ষে শরীর ও মুখ ঢেকে রাখা সম্ভব নয়, ফলে তা শারিয়া বিরোধী।

তালেবান মন্ত্রী জানান, মেয়েদের তখনই খেলতে অনুমতি দেওয়া হবে যখন তাদের জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু ১৭ মাস পরও আফগান নারীরা দেশে বা বিদেশে কোনও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে না।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আফগানিস্তানকে সাবধান করে দেয় নারী অ্যাথলেটদের খেলার অনুমতি না দিলে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

২০২১ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তালেবানের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে। প্রথম দিকে ক্লাসরুমে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের দুই পাশে বসিয়ে মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয় হয়। পরে শ্রেণীকক্ষ আলাদা করে দেয়া হয়।

১৭ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে দেয়া হয়। ঐ ভবনে এখন নতুন তৈরি নৈতিকতা প্রচার ও অনৈতিকতা রোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস। ২০২১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু পুরুষ শিক্ষক ও ছাত্রদের স্কুলে ফিরতে বলা হয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে টিভি নাটকে নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়। নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের ক্যামেরার সামনে মাথায় হিজাব পরার নির্দেশ দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ভয়ে অনেক নারী মিডিয়া কর্মী কাজ ছেড়ে দেন। অনেকে বিদেশে পালিয়ে যান। এমনকি যেসব নারী নাটকে কণ্ঠ দিতেন তাদেরও ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।

২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে বিদেশি বিভিন্ন সিরিয়াল স্থানীয় ভাষায় ডাবিং করে প্রচার করা হচ্ছিল। শত শত নারী এগুলোতে নিয়মিত কণ্ঠ দিতেন। এসব বিদেশী সিরিয়াল তালেবান নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে চাকরি হারান শত শত নারী।

তালেবান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নারীদের যাতায়াত ও ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ জারি করে। নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় যেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের জানানো হয়, হিসাববিহীন নারীদের যেন তারা যাত্রী হিসেবে না ওঠায়।

পুরুষ সঙ্গী (বাবা, পুত্র, স্বামী বা ভাই) না থাকলে কোনও নারী ৪৫ মাইলের বেশি দূরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তালেবান পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীদের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাবুল ছাড়াও অন্য কিছু জায়গায় নারীদের জন্য আমান নামে কিছু নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল যাতে গৃহে নির্যাতন থেকে পালিয়ে তারা নিরাপদে থাকতে পারে।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারীদের হিজাব পরা নিশ্চিত করতে প্রচারণা শুরু করে তালেবান। রাস্তায় রাস্তায় এ ব্যাপারে বিলবোর্ড টাঙানো হয়।

৭ই মে তালেবান নারীদের জন্য ড্রেস কোড ঘোষণা করে। জানানো হয়, জনসমক্ষে সব নারীকে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। না মানলে ঐ নারীর পুরুষ অভিভাবকদের শাস্তি পেতে হবে।

তালেবানের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাবুল ও অন্যান্য প্রদেশে বিদেশী ভাষা শিক্ষার কিছু প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে জানায় তালেবান এগুলো একরকম জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে।

গত মাসে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগান সোশ্যাল মিডিয়াতে গ্রাজুয়েশন উদযাপনের বহু ছবি প্রকাশিত হতে শুরু করে। কিন্তু সেখানে শুধুই পুরুষ ছাত্রদের ছবি। শুধু তাদেরই মাথার হ্যাট খুলে আকাশে ছুড়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যায়। নারীদের সেখানে চোখেই পড়েনি।

২০২২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর তালেবান সরকার সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিওতে নারীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা যেন তাদের নারী কর্মীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.