দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে বেশকিছু চমক থাকবে। অনেক আসনে আসবে নতুন মুখ। প্রার্থী তালিকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সাবেক আমলা, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি স্থান পেতে পারেন।
পাশাপাশি দলের জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণ নেতারা মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা না করার বিষয়ে দেওয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব।
জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ অনেকটাই এগিয়ে রেখেছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ, দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট, অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, তৃণমূলে দল ও সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনীয় নম্বর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা এগিয়ে থাকবেন, তারাই মনোনয়ন পাবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী বাছাই শুরু করবে আজ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, কাল (আজ বৃহস্পতিবার) আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের সভা। এখন আর কোনো জল্পনা-কল্পনার সুযোগ নেই। যারা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তাদের মধ্যে যোগ্যদেরই বিবেচনা করব।
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের তারকা, সাবেক আমলা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তো ভালো। তারা আমাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, প্রতি আসনে গড়ে ১১ জন করে ফরম কিনেছেন, তাদের মধ্যে কিন্তু ১০ জনই বাদ পড়বেন। একজনকে আমরা মনোনয়ন দেব। এর সঙ্গে আমাদের জোট রয়েছে। তাদের কয়টা আসন দেওয়া হবে, ফলে সবকিছু যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
দলীয় প্রার্থী ঠিক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক। আমরা অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র অনুসরণ করি। জনমত জরিপ, সরকারি জরিপ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটা সেল আছে। সব মিলিয়ে যার নম্বর বেশি তাকেই মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। সব বিবেচনা করেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। শরিক ও জোটের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে তিনি বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থিতা ঠিক করা হবে।
কার সঙ্গে কার নির্বাচনি সমীকরণ হয়-সেটা মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত চলবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার এই প্রক্রিয়া শেষ হয়। সেখানে দেখা গেছে, ৩০০ আসন হিসাবে প্রতিটিতে গড়ে ১১ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। দলীয় নেতা-মন্ত্রী ছাড়াও সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের অন্তত ১৭ জন তারকা মনোনয়ন পেতে চান।
এছাড়া ১৩ সাবেক আমলা ও ১৪ জন সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের অন্তত অর্ধশত শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নৌকার প্রার্থী হতে চান। এর বাইরে জোটের (১৪ দল) দুই শরিক দলের চার নেতাও আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম কিনেছেন।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন-এমন কয়েকজন কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা এবারও দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক আসনে ফরম কিনেছেন। তাদের সঙ্গে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতা।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বড় অংশ রয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। প্রতিটি নির্বাচনেই সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে অনেককেই দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নির্বাচনি যুদ্ধে এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।