হলি আর্টিজান হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি পরে আদালতে হাজির হয়েছিল। রিগান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর হোসেনের মাথাও ‘আইএসের টুপি’ দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে আদালতে আনার সময় কারও মাথায় এমন টুপি ছিল না।রায় ঘোষণা শেষে সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাথায় আইএসের একটি টুপি পরে। এরপরই উপস্থিত আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে বিষয়টি। কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা এসব জঙ্গিরা আইএসের প্রতীক সংবলিত টুপি কোথায় পেলেন তা নিয়ে উপস্থিত সবার মধ্যে বিস্ময় ও প্রশ্ন তৈরি হয়। এরা কারাগার থেকে এ টুপি নিয়ে এসেছেন নাকি আদালতে আনার সময় বা আনার পর কোনোভাবে তাদের কাছে এই টুপি এসেছে—এ নিয়েও আদালত চত্বরে আলোচনা চলছিল।
টুপি কোথায় থেকে পেলো—এমন প্রশ্নের জবাবে রিগ্যান বলে, ‘কারাগার থেকে নিয়ে এসেছি।’ এরপরেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে প্রিজনভ্যানে উঠিয়ে কারাগারে নিয়ে যায়।
রিগ্যানের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আসামি চার বছর কারাগারে আছে। এ টুপি সে কোথায় পেলো, এটা তো আমার প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমি আমি কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নানা মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
রায় ঘোষণা শেষে অন্য আসামিদের সঙ্গে রিগ্যানও আল্লাহ আকবর বলে চিৎকার করে। আসামি রাজীব গান্ধী বলে, ‘হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে তারা কোনও অন্যায় করেনি। তারা এজন্য বেহেশতে যাবে। এই দেশে একদিন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে সে।’
রিগ্যানের আইএসের টুপি পরে আদালতে আসার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি বিস্মিত হয়েছি। এই দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’
তিনি আরও বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামিরা খুবই উদ্ধত আচরণ করেছে।
এই নিয়ে আজ দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি জেনেছি, ‘এটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমি এখনই তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত নব্য জেএমবির এসব জঙ্গিদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় তাঁরা প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে চিৎকার করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে বলতে থাকেন। একই সঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া হামলায় অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে এক জাপানি ও দুই শ্রীলংকানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
জঙ্গি হামলার ঘটনায় ওই বছরের ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর এ চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনায় জড়িত ‘চিহ্নিত’ বাকি ১৩ জন এরই মধ্যে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।
এরপর গত বছরের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ হয়।
গত ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতের কাছে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর চলতি মাসের ৬ নভেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান। আর ১৭ নভেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়