ইন্টারনেট-সেবা প্রদানকারীদের (আইএসপি) অনুকূলে নতুন লাইসেন্স ইস্যু করা বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। থানা বা উপজেলা পর্যায়ে নতুন লাইসেন্স ইস্যুর পাশাপাশি উপজেলা থেকে জেলা এবং জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে লাইসেন্স উন্নীতকরণের আবেদনও নামঞ্জুর করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে দীর্ঘদিন যাবত আবেদন গ্রহণ করার পর নতুন এক নীতিমালা প্রণয়ন করে—আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।
এতে করে বিপাকে পড়েছেন অন্তত ৪১৯ জন আবেদনকারী। লাইসেন্সের আবেদন ফি তথা আবেদন মূল্যায়নের ফি বাবদ জমা দেওয়া ৩০ লাখের বেশি টাকা ফিরে পাওয়ার কোনও আশা দেখছেন না তারা। তবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘ইন্টারনেট-সেবা প্রদানকারীর (আইএসপি) সংখ্যা নিরূপণ সংক্রান্ত নীতিমালা’ শিরোনামের ওই নীতিমালা প্রয়োগ করা হলেও এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি আড়ালে রয়ে গেছে।
জানা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের আগে বিভিন্ন সময় আইএসপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেওয়া হয়। এভাবে উপজেলাভিত্তিক নতুন লাইসেন্সের জন্য ৩০১টি, লাইসেন্স আছে এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে উন্নীতকরণের জন্য ৮৩টি এবং জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নীতকরণের জন্য ৩৫টি আবেদন জমা পড়ে। বিটিআরসির ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনের আলোকে আবেদনগুলো জমা পড়ে। একই গাইডলাইনে উল্লিখিত আবেদন যাচাই ফি বাবদ উপজেলা বা নতুন লাইসেন্সের জন্য ৫ হাজার টাকা, জেলা পর্যায় এবং বিভাগীয় পর্যায়ের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন আবেদনকারী ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। ৪১৯টি আবেদনের পক্ষে ফি ও কর বাবদ মোট ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫০টাকা বিটিআরসিতে জমা হয়।
প্রায় দুই বছর ধরে জমা পড়া এসব আবেদনের কোনও সুরাহা না করেই নতুন আবেদনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিআরসি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে কমিশন। কমিশনের লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক মো. নূরন্নবীর সই করা ২০২২ সালের ৪ সেপেম্বর জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আইএসপি লাইসেন্স প্রত্যাশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স-প্রাপ্তির লক্ষ্যে কমিশন বরাবর আবেদন করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো।’
এর ঠিক তিন মাস পর একই কর্মকর্তার সই করা আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমে নতুন উপজেলার জন্য ৩০১টি আইএসপি লাইসেন্সের আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়টি প্রকাশ করে কমিশন। এর এক মাস পর ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়ে পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিটিআরসি। এতেও সই করেন সংস্থার পরিচালক নূরন্নবী।
ইন্টারনেট-সেবা প্রদানের বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট আবেদন নামঞ্জুরের পেছনে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেটের দাবি নাকচ করে দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজারে এমনিতেই অনেক প্রতিযোগিতা আছে এবং আমরাও চাই যে, আরও প্রতিযোগিতা আসুক। আমরা প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসা করছি। তবে এটাও ঠিক, যারা ইতোমধ্যে এই ব্যবসায় আছেন, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি, যাদের লাইসেন্স আছে কিন্তু অধিক্ষেত্র উন্নীত করতে চাচ্ছেন, তাদেরকে আগে লাইসেন্স দেওয়া যায় কিনা। তারপর যদি এলাকাভিত্তিক প্রয়োজন হয়— নতুনদের লাইসেন্স দিলো। আমি লাইসেন্স আপগ্রেডেশনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
লাইসেন্স আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাদেরকে লাইসেন্স দিলে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, না দিলে হবে না। এটা একটা বাজারে পরিণত হয়েছে। আমরা আমাদের জনসংখ্যার অনুপাতে লাইসেন্স দিই। আমি লাইসেন্স দেবো, আর তারা মারামারি করবে, এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যেখানে প্রতিযোগিতা দরকার, সেটা বিটিআরসি বিবেচনা করে।’
প্রসঙ্গত, দেশে আইএসপি লাইসেন্সের সংখ্যা এখন ৩ হাজার। এর বাইরে ২ হাজারের বেশি আইএসপি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।