আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল— চলতি বছরের জুনের মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে রাখা। তবে, সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার সকালে আইএমএফ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঋণের শর্তানুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে, সে বিষয়ে দাতা সংস্থাটিকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের ঋণের যেসব শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পূরণ করার কথা, তার মধ্যে রিজার্ভের শর্ত পূরণ ছাড়া বেশিরভাগ শর্তই পূরণ হয়েছে। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির আগে শর্তের অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আজ বৈঠক করছে আইএমএফ।
মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে ঋণের শর্তানুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রমতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভর্তুকি রিজার্ভ, ব্যাংক, খেলাপি ঋণ, মুদ্রানীতি, অর্থপাচার, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব পদ্ধতিতে সংস্কারসহ সামগ্রিক অর্থনীতির বিষয়ে আইএমএফের আলোচনা আজ থেকে শুরু হয়েছে। দাতা সংস্থটির অনেক শর্ত পূরণ ছাড়াই আলোচনার প্রথম দিনে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অর্থপাচার, সরকারের ভর্তুকি, মুদ্রানীতি, রিজার্ভের সার্বিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকি বিষয়াবলির ওপর তদারকির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আইএমএফের প্রথম বৈঠকে সংস্থাটির সফরকালীন কার্যক্রম ও পরিকল্পনার ওপর প্রেজেন্টেশনের আয়োজন করা হয়।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ দল বাংলাদেশ ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন রিজার্ভের শর্ত পূরণ, রিজার্ভ থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অর্থসহ যা অন্যান্য ব্যয়যোগ নয়, তা বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হিসাবে রিজার্ভ গণনা, বাজারভিত্তিক একক ডলার রেট বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখবে। আর্থিক খাতের সংস্থার, মুদ্রানীতি হালনাগাদ, বাস্তবায়নের দুর্বলতা, নীতির আলোকে সামনের দিনে সম্ভাব্যতা, ট্রেজারি বিলের সুদহার, স্মার্ট সুদহার পদ্ধতি, অর্থনীতিতে নতুন সুদহারের বাস্তব চিত্র বিশ্লেষণের নজরদারি রাখার লক্ষ্য দাতা সংস্থাটির।
পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বুধবার সকালে শুরু হয়। বৈঠকে সংস্থাটি রুটিন কার্যাবলি ও পরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে ঢাকায় সফররত প্রতিনিধি দল। আগামী ১৮ অক্টোবর রেপআপ বৈঠকের মধ্যে দিয়ে আলোচনা শেষ হবে। তবে এসব বৈঠকে সঙ্গে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির কী সম্পর্ক তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও সংস্থাটির শর্তের আলোকে অক্টোবর মাসের জন্য নিট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল। গত জুনের মধ্যে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে রাখার কথা ছিল, যা পূরণে ব্যর্থতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।