“আমি বড় মাপের কোনো অভিনেতা নই। তাই অভিনয় নিয়ে খুব একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইনি। তারপরও কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছি, যাদের জীবনধারা, চিন্তাচেতনা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ছিল অজানা। এটা করেছি শুধু অভিনয়ে নিজেকে ভাঙা এবং নির্মাতাদের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য। কিন্তু এটাও সত্যি, দর্শক যে ধরনের চরিত্রে আমাকে বেশি দেখতে চান এবং নিজে যেসব গল্প ও চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সেগুলোই করি। এটা তখনই নির্ধারিত হয়ে গেছে, যখন নিয়মিত অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০০৪ সালে প্রথম টেলিছবি ‘অফবিট’ এবং পরে ধারাবাহিক নাটক ‘কাছের মানুষ’-এ অভিনয়ের বিষয়টি ছিল অপরিকল্পিত। শখের বসেই অভিনয় করা। যে জন্য মাঝে বেশ কিছুটা সময় অভিনয় করিনি। এরপর একটা বিরতি দিয়ে যখন ‘মন ফড়িংয়ের গল্প’, ‘নীলপরী নীলাঞ্জনা’সহ আরও কিছু নাটক, টেলিছবিতে অভিনয় করলাম, দেখলাম দর্শকও চাইছেন গানের পাশাপাশি যেন নিয়মিত অভিনয় করি। তাদের ভালোবাসা তো ছিলই, একই সঙ্গে নিজেরও অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। এ জন্য অভিনয় অঙ্গন থেকে আর দূরে যাওয়া হয়নি। এভাবেই ‘মেমোরিজ…কল্পতরু’ পর্যন্ত আমার অভিনীত নাটক, টেলিছবির সংখ্যা শতকের কোঠা স্পর্শ করেছে।’ কণ্ঠশিল্পী থেকে পুরোপুরি অভিনেতা বনে যাওয়া এবং অভিনয় জীবনের শততম কাজ নিয়ে এ কথাই শোনালেন তাহসান।”
তাহসান বলেন, ‘আমি দেখতাম, ভক্তরা আমার কাছে গানের সংখ্যা হিসাব করে পাঠাত। কিছুদিন আগে এক ভক্ত নাটকের তালিকা করে পাঠায়। দেখলাম, ৯৭টি নাটকের তালিকা। এরপর বিষয়টি আমাকে ভাবায়। কাছের পরিচালক ও একজন প্রযোজক শততম নাটক নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করলেন। এই নাটকের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা গল্প চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। এতে তরুণ লেখকদের মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে গিয়েছিল। ৭০টি গল্প জমা পড়েছিল নাটকের জন্য। সেখান থেকে একটি গল্প নির্বাচন করে শুরু হয় নাটক নির্মাণ। নানা ধাপ পেরিয়ে আমরা এই কাজ করি। তাই তো নাটকের শুটিং শুরুর আগে আমরা কেকও কাটি।’ মাবরুর রশীদ পরিচালিত এই নাটকে তাহসানের সহশিল্পী শায়লা সাবি।
গানের মানুষ তাহসান নাটকে অভিনয় করবেন, এমনটা কখনো ভাবেননি। ব্ল্যাক ব্যান্ড নিয়েই ছিলেন ব্যস্ত। ২০০৪ সালে আফসানা মিমি অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তাহসানকে। শুরুতে অনাগ্রহী হলেও গল্প পড়ার পর তাহসানের মনে হয়, নাটকটিতে অভিনয় করা যায়। তাহসান বলেন, ‘ছোটবেলায় স্কুলে যখন পড়তাম, আজাদ আবুল কালাম ভাইয়ের কাছে অভিনয়ের কর্মশালা করেছিলাম। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টুকটাক অভিনয় করেছি। জয়া আহসানের মতো অভিনয়শিল্পীর বিপরীতে অভিনয় করব, এটা অবশ্য তখনো ভাবিনি। আর এই নাটকে আমার একটি সংলাপ ছিল, “হ্যালো আমি তাহসান, এ পাড়াতে থাকি।” অফবিট নাটকটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল, কয়েক বছর ধরে এই সংলাপ অনেকের মুখে মুখে শুনেছি।’
নাটক-টেলিছবি ছাড়াও চলচ্চিত্র ‘যদি একদিন’ এবং ওয়েব সিরিজ ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বুলেট’-এ অভিনয় করে দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তাহসান। যে জন্য অনেকের মনে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কণ্ঠশিল্পী পরিচয়কে কি ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অভিনেতা তাহসান? এর উত্তর জানতে চাইলে তাহসান হেসে বলেন, ‘না ঠিক এভাবে কখনও ভাবিনি। গানের সঙ্গে সখ্য আজীবনের। এটাই প্রথম এবং প্রধান পরিচয় বলে থাকি সবসময়। কিন্তু এখন অনুভব করছি, অভিনয়ের প্রতি ভালো গানের চেয়ে কম নয়। যে জন্য নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। অবশ্য এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টা মন্দ লাগছে না। তাই যতদিন পারি, অভিনয় ও গান একইভাবে চালিয়ে যেতে চাই।’
অভিনয় নিয়ে তো অনেক কথা হলো। সেই সঙ্গে তাহসানের এও জানা হলো যে, অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা, মডেলিং ও শিক্ষকতা নিয়েও আগের মতো ব্যস্ত থাকতে চান। এর পাশাপাশি গান, লেখা, সুর ও সংগীতায়োজনও চলবে। গানের নতুন আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য ব্যান্ডের বেশ কিছু গানের কাজ নিয়ে এখন ব্যস্ত। প্রতি মাসে একটি করে মোট ১২টি আনপ্লাগড ভার্সনের গান প্রকাশের ইচ্ছা আমাদের। সবগুলো গান প্রকাশের পর একটি প্লে লিস্ট তৈরি করে দেব। এভাবেই গান আর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’