কেরিয়ারের শুরু বাংলাদেশের ছবিতে। ক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন টলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। কাজ করেছেন হিন্দি, তেলুগু, তামিল ছবিতেও। এবার তিনি কাজ শুরু করলেন একটি ইংরেজি-হিন্দি দ্বিভাষিক ছবিতে।
দোল খেললেন?
বাবা, মা, দিদি শো করতে গিয়েছেন। মেজদি মৌবনী ব্যস্ত শ্যুটিংয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে অবশ্য খেলা যেত। কিন্তু আমাদের পরিবারের নিয়ম, বাবা-মা ও অন্য গুরুজনদের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে তবেই খেলা শুরু হয়। তাই এবার দোলটা বাদই দিলাম।
কেরিয়ারের শুরু থেকেই একটা বস্তাপচা প্রশ্ন নিশ্চয়ই শুনতে হয়েছে। রক্তে ম্যাজিক অথচ আপনি অভিনয়ে। কেন?
একদম। বহুবার শুনেছি। আমার দিদি মানেকা ম্যাজিক করে। ও আমাদের বংশের নবম প্রজন্ম। তবে আমি বা আমার মেজদিও কিন্তু ম্যাজিক জানি। আসলে আমাদের বাড়ির কুকুরটাও ম্যাজিশিয়ান। (হাসি) ফ্যামিলি শো-তে আমরা পাঁচজনই ম্যাজিক দেখাই। আর একটা কথা। আজকের দিনে ম্যাজিককে কেউ অলৌকিক বলে ভাবে না। সবাই জানে, ব্যাপারটা আসলে কারসাজি। বিজ্ঞান আর শিল্পের মিশ্রণ। বিজ্ঞান হল ম্যাজিকের ট্রিকটা। বাকিটা শিল্প। অর্থাৎ অভিনয়। সেই হিসেবে বাবা, মা, দিদি স্টেজে যে কাজটা করেন আমিও সেটাই করি। অভিনয়। তাছাড়া একটা নকল চরিত্রকে সত্যি করে তোলার অভিনয়টাও ম্যাজিকই। দর্শক যদি বড় পর্দায় আমাকে দেখে বলে ‘মুমতাজ এটা করল, ওটা বলল’ তার মানে আমি সেটা করতে পারিনি। যদি আমাকে দেখে মনে হয় ওই মেয়েটা করল বা বলল, তার মানে আমি চরিত্রটা হয়ে উঠেছি। সেটাই ম্যাজিক।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল আপনি অভিনয় করছেন। কীভাবে দেখছেন জার্নিটাকে?
এটা একটা রোলার কোস্টার রাইড। প্রচুর ওঠানামা থাকে। মোটেই কেকওয়াক নয়। কাজটা অত্যন্ত কঠিন। ইট ডিমান্ডস ইওর লাইফ। এটাকে আমার কাজ হিসেবে দেখি না। এটাই আমার জীবন। জার্নিটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি কোনও অ্যাকটিং স্কুল থেকে শিখে আসিনি। প্রতিটা ছবির সঙ্গে সঙ্গে শিখেছি। সহ অভিনেতা, পরিচালক বা সিনেমাটোগ্রাফারদের থেকে শিখেছি। এমনকী, নিজের পুরনো কাজ দেখেও শিখি।
নিজের পুরনো ছবি দেখেন?
দেখি আর হাসি। ‘০৩৩’ আমার প্রথম ছবি। ওই সব পুরনো কাজ দেখলে মনে হয়, ইস! ওই জায়গাটায় কী করলাম! কী বোকা বোকা! তবে আমি নিজেকে বেশিক্ষণ স্ক্রিনে দেখতে পারি না। আফশোস হয়। আমি নিজের খুব কড়া সমালোচক। হয়তো পাশের আসনের দর্শকই ওই শটটা দেখে হাততালি দিল। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট হতে পারি না। আসলে আমার খালি মনে হয়, কিস্যু হয়নি। মাইলস টু গো।
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, তামিল, তেলুগু ছবিতেও কাজ করেছেন। কলকাতার সঙ্গে কতটা ফারাক বোঝেন?
সেই অর্থে ফারাক তেমন নেই। কেবল একটাই ফারাক। প্রফেশনালিজম। আমার মনে হয় ওই জায়গাটায় আমরা ওদের থেকে পিছিয়ে রয়েছি। এখানে ট্যালেন্টের অভাব নেই। কিন্তু প্রফেশনালিজমটা একটু কম মনে হয়।
‘স্টার কি়ড’ হওয়ার চাপ কতটা বুঝেছেন?
মারাত্মক চাপ। পরীক্ষায় কম পেলে লোকে বলবে, দূর, এদের আবার পড়াশোনা হয় নাকি। যা হোক করে পাশ করবে, তার পর কী করবে বাবা-মা’ই প্ল্যান করে রেখেছে। আবার রেজাল্ট ভালো হলে বলা হবে, বাবা নিশ্চয়ই ফোন করে দিয়েছে। কোশ্চেন পেয়ে গিয়েছে। (হাসি) আসলে লোকে ভাবে ‘স্টার কিড’ হলে হয়তো সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু কথাটা একেবারেই ভুল। লোকে কেবল বাবার সঙ্গে তুলনা করে সেটাই নয়। আমাদের তিন বোনকে নিয়েও তুলনা চলে। তবে একটা কথা বলতে পারি, বাবা-মা এমন ভাবে আমাদের তৈরি করেছেন, আমরা নিজেদের কখনও তারকা-কন্যা ভাবিইনি। সেই শিক্ষাটা কাজে লাগিয়েই চাপটা সামলে নিতে পারি। সত্যি বলতে কী, কখনও তেমন আচরণ করলে বাবা-মা বলবে, লিভ দ্য হাউস।
নতুন কোন কোন ছবির কাজ করছেন?
‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’, ‘ইমরান’ বলে দু’টো ছবির পোস্ট প্রো়ডাকশন চলছে। ‘ইমরান’ই আমার প্রথম বাংলাদেশের ছবিতে কাজ। আর একটা ছবির শ্যুট শুরু হবে। আরও একটা ছবি, নাম এখনও ঠিক হয়নি। আর এই মুহূর্তে কাজ করছি একটা শর্ট ফিলমের। নাম ‘ভিভির জুন্তোস’। ইংরেজি-হিন্দি দ্বিভাষিক ছবি। গল্পটা একটা কাপলকে নিয়ে যারা লিভ টুগেদার করে।
নিজের কেরিয়ারের আগামি দিন নিয়ে কী ভাবছেন?
স্বপ্ন দেখি, যেন আমি একজন আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী হয়ে উঠতে পারি দাদু বা বাবার মতো। সরকার পরিবারের সুনাম যেন রাখতে পারি। জানি এখনও অনেক শেখা বাকি। অনেক দূর যেতে হবে। এই স্বপ্ন সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।