‘হ্যালো…তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?” তিনি টেলিফোন নামক কোনও যন্ত্রের আবিস্কারের কথা না ভাবলে হয়তো বেলা বোস’কে নিয়ে অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গানটিই তৈরি হতো না। বেলার উত্তর কি ছিল সেটা আজও জানা যায়নি।
তেমন এটাও প্রায় অজানা যে টেলিফনের আবিষ্কর্তা কোনওদিন নিজের অফিসে ফোন রাখেননি। শুনতে চাননি ওপার থেকে কোনও রকম ‘হ্যালো’ নামক কথা। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে এমন দিনেই বিশ্ববাসীকে ফোন তুলে প্রথমে ‘হ্যালো’-ই বলতে হয় এমন একটা অলিখিত নিয়ম ধারা যেন ‘রচনা’ করে দিয়েছিলেন স্যার অ্যালেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।
নিজের অফিসে টেলিফোন রাখতেন না এই বিজ্ঞানী। কিন্তু প্রশ্ন উঠবেই, কেন ? নিজে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা হয়ে কেনই বা তিনি অন্তত অফিসের সময়ে ‘আউট অফ কমিউনিকেশন’ হয়ে থাকতেন? বিজ্ঞানীর বক্তব্য ছিল, টেলিফোন অফিসে থাকলে বহু মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতে তাঁর গবেষণার কাজে অসুবিধা হতে পারে। তাই আর যেখানেই থাকুক, অফিসে টেলিফোন তিনি রাখতে দেননি।
অন্য দাবিও রয়েছে। বলা হয়, স্কটিশ বিজ্ঞানী নিজের আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী সুফল এবং কুফল দুইই সম্ভবত দেখতে পেয়েছিলেন। হয়তো বুঝেছিলেন যন্ত্র কাজের হলেও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিজের অফিসে কখনোই টেলিফোন রাখতেন না গ্রাহাম বেল।
১৮৭৬ সালের পর থেকেই যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব আসে তাঁরই হাত ধরে। মানুষের সঙ্গে মানুষের দুরত্ব ছোট হতে শুরু করে। ১৮৮৫ সালে গ্রাহাম বেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমেরিকান টেলিফোন অ্যান্ড টেলিগ্রাফ কোম্পানি, যা ‘টিঅ্যান্ডটি’ নামে পরিচিত।
একসময় হাতের একটি মুঠোয় যে যন্ত্র আসত না তার ক্রমে বিবর্তন হয়েছে। ছোট হয়ে তা এখন মুঠোফোন। এক জায়গায় বসে থাকার বদলে যন্ত্র এখন মানুষের সর্বক্ষনের, অর্থাৎ মোবাইল। এখন বহু মানুষের ভার্চুয়ালবিশ্বে বাস করার মাধ্যম গ্রাহাম বেলের দেড়শো বছর আগের সেই আবিষ্কার। অনেকেরই একাকিত্বের সঙ্গী এবং একাকিত্ব নামক সমস্যা তৈরির অন্যতম কারিগর এই টেলিফোন। তবু মানুষ ‘হ্যালো’ বলতে ভালোবাসে। না বললেও মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমে হ্যালো লিখে কথা বলতে শুরু করতে পছন্দ করেন।
প্রসঙ্গত মার্গারেট হ্যালো ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বান্ধবী । টেলিফোন আবিস্কারের পর ১০ মার্চের এমন দিনেই
তিনি প্রথম ফোন করেন তাঁর গার্লফ্রেডকে এবং যে কথাটি বলেন, তা ছিল ‘হ্যালো’। এবার হ্যালো এখন যেমন সম্বোধনের অর্থ তেমনই আবার বিজ্ঞানীর ভালোবাসার ডাক এবং বিশ্বজুড়ে ফোন ধরে প্রথমে ‘হ্যালো’ বলার পথ চলা শুরু। ‘হ্যালো…… শুনতে পাচ্ছেন?”