The news is by your side.

মেসির সামনে স্বপ্ন ভঙ্গ নাকি স্বপ্ন জয়ের হাতছানি

মেসির ফুটবল থেকে অপ্রাপ্তি দূর হবে? ফুটবল গোলার্ধের বড় অংশের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা!

0 119

লিওনেল মেসি, গোল করছেন, করাচ্ছেন এবং সর্বোপরি প্রতিপক্ষকে ‘নাজেহাল’ করছেন প্রতি ম্যাচে। অবিশ্বাস্য!

প্রথম গ্রুপ ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হারের পর মেসি এবং তাঁর আর্জেন্টিনাকে আবার ঘিরে ধরেছিল হতাশার ভারী চাদর। কিন্তু মেসি ম্যাজিক বলে একটা কথা আছে না। তিনি জাগলেন, দলকেও জাগালেন। এরপর সাফল্যের জুড়িগাড়ি ছুটিয়ে মেসির আর্জেন্টিনা আরেকবার ফাইনালে। নিজের দ্বিতীয় ফাইনালে মেসির ফুটবল থেকে একমাত্র অপ্রাপ্তি দূর হবে কি না, ফুটবল গোলার্ধের বড় অংশের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা এটা নিয়েই।

অথচ বিশ্বকাপ শুরুর সময়ের ভাবনা ছিল পুরো উল্টো। এই বয়সে এই মঞ্চ মাতানো সোজা ব্যাপার নয়। শুধু দল বেঁধে চলে এলেই হয় না। তা-ও আবার তরুণ দলের ‘বুড়ো’ নেতা হয়ে এসেছেন মেসি। উল্টো দুই দশকে গড়ে তোলা ইমেজ না ক্ষুণ্ন হয় তাঁর। অন্য কেউ হলে মানুষ খেয়ালও করত না। লিওনেলে মেসি বলেই এত দিনের অর্জন-সম্মানের দিকেও তো তাকাতে হবে। ৩৫ বছরের সহজ-সরল মানুষটা কেন যে লিওনেল স্কালোনির ফাঁদে পা দিয়েছেন!

এই ভেবে লিওনেল মেসিকে নিয়ে মিডিয়া ট্রিবিউনে কিছু আর্জেন্টাইন সাংবাদিককেও আক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁদের ব্যাখ্যাটা ছিল, ‘এই বয়সে মেসি দলকে জেতাতে পারবেন না। মাঠে থেকে তিনি সাহস জোগাবেন, ছোটরা খেলে দেবে। ’ কিন্তু সৌদি আরব ম্যাচ বুঝিয়ে দিয়েছে, যাঁদের ওপর ভরসা করে কাতারে এসেছিলেন মেসি, সেই তাঁরাই তাকিয়ে তাঁর দিকে। তিনিও যেন দিব্যদৃষ্টিতে দেখে ফেলেছিলেন পরিণতি। বুঝে গিয়েছিলেন, এই বয়সেও দলকে কাঁধে বয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ওই ম্যাচটিই খুলে দিয়েছিল লিওনেল মেসির চোখ। পরের ম্যাচে নিজে চেষ্টা করেছেন এবং জাদু দেখিয়েছেন। সবগুলো না হলেও দু-একটি প্রদর্শনী দেখে মানুষ এখনো  হৈহৈ করে। মেক্সিকোর জন্য এইতো যথেষ্ট। আর্জেন্টিনা ও মেসির ফেরা দেখে আনন্দ-উৎসবে দোহা কাঁপিয়ে ফেলেছিল সমর্থকরা। এমন উন্মাদনা দেখে জাদুকর নিজেও যেন সামর্থ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পণ করেছিলেন। একমাত্র পোল্যান্ড ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচই তাঁর কীর্তিতে মহীয়ান। গোল করেছেন, সেটা না হলে গোল সাজিয়ে দিয়েছেন সতীর্থকে। এর পরও কঠিন করে ফেলেছিলেন নেদারল্যান্ডস ম্যাচটি। মলিনাকে দিয়ে দারুন গোল করিয়ে এবং নিজে গোল করে ২-০ গোলের লিড নেওয়ার পরও ‘ছোট’রা ম্যাচের ভাগ্য গিয়ে গিয়েছিল টাইব্রেকারে। এই জয়ে কৃতিত্বের ভাগ ইমি মার্তিনেজকেও কিছু দিতে হবে।

এরপর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে আর কাউকে ভাগ দেওয়ার কিছু নেই। পণ্ডিত জাকির হোসেনের তবলার তালে যেমন মহল তৈরি হয়, চোখ বুজে কান পেতে যার শুধু রস আস্বাদন করা যায়, মেসি সে রকম এক উপভোগের মহল তৈরি করেছিলেন লুসাইল স্টেডিয়ামে। পার্থক্য হলো, এটা চোখ খুলে দেখতে হয়েছিল এবং ফুটবলের রসোত্তীর্ণ রূপের মুগ্ধতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল সবাই। ফাইনালে ওঠার ম্যাচে জাদুকরের পায়ে ফুটবলের মনোহরী ছবি দেখার পর অনেকের দিব্যদৃষ্টি খুলে গেছে। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী খেলছেন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপ। এটাই হতে যাচ্ছে মেসির বিশ্বকাপ!

বয়স হলে শিল্পীর হাত কাঁপে বড়জোর, সহজাত ব্যাপারগুলো হারিয়ে যায় না। মেসির বেলায়ও তা-ই হয়েছে। বয়স গতি শুষে নিয়েছে কিছুটা, তবে ফুটবল মেধা আগের মতোই ধারালো। বাঁ পায়ের শিল্পিত কারুকাজে একটুও হেরফের হয়নি। মেসির বাঁ পায়ের সঙ্গে বলের সুরতাল নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হয়েছিল ইউরোপে। তাঁর কোন মুভে বলের সঙ্গে পায়ের অবস্থান কী থাকে, সেটা বের করা গেলে ফর্মুলা দাঁড়িয়ে যায়। শিল্পের মূল্যায়ন কি বিজ্ঞান করতে পারে! সেটা পারেন কেবল আরেকজন শিল্পী। তাই হেরেও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যমাঠের শিল্পী লুক মডরিচ শুভ কামনা জানিয়ে বলছেন, ‘আশা করি, মেসিই বিশ্বকাপ জিতবে। সে-ই ফুটবল ইতিহাসের সেরা, এটা ওর প্রাপ্য। ’

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.