বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনীর তদন্তের প্রকৃত চেহারা দেখতে পাননি জনগণ।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব জানান তিনি।
তদন্ত প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে যেভাবে তদন্ত করা উচিত ছিল, সেটা হয়নি। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে একটি তদন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রকৃত চেহারা জনগণ দেখতে পাননি।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত ভয়াবহ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। এ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনি এবং নৃশংসভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।’
বিচারব্যবস্থা নিয়ে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুটি বিষয়ে বিচার হয়েছে। একটি হলো বিদ্রোহ ও হত্যা, অপরটি হলো বিস্ফোরক মামলা। এর মধ্যে বিদ্রোহ ও হত্যা মামলায় বেশ কিছু মানুষের সাজা হয়েছে, কারও খালাস হয়েছে। কিন্তু সাত হাজারের মতো সৈনিক, যাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসছেন ১৪ বছর ধরে, তাঁদের বিষয়ে সুরাহা হয়নি। তাঁদের মামলাটা এখনো শুনানি করা হয়নি।
‘আমি কিছুদিন আগে জেলে গিয়েছিলাম’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেখানে গিয়ে দেখেছি, এখানে অনেক বিডিআর সদস্য অমানবিক জীবন যাপন করছেন। তাঁদের পরিবার ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বিচারব্যবস্থার কাছে দাবি করব যাতে অতি দ্রুত তাঁদের বিচারকাজ শেষ করে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।’
মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছিল দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। সেনাসদস্যরাও সেগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব সংকট নিরসন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
এর আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের দিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। তিনি সচরাচর ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু সেদিন তাহলে ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে করে দুই দিনের জন্য কোথায় যেন চলে যান। লন্ডন থেকে তারেক রহমান তাঁকে একাধিকবার ফোন দিয়েছেন, কথা বলেছেন। এটা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র।
মাহবুব উল আলম হানিফের মন্তব্যের বিষয় মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এটা দায়িত্বহীন মন্তব্য। সব সময়ই মূল সমস্যায় না গিয়ে অন্যদিকে যেতে চান তাঁরা। মূল সমস্যার সমাধান করতে পারেন না তাঁরা।
আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমান নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ হয়। পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। মোট নিহত হন ৭৪ জন। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহে নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত অনেক কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা দুই মামলার একটি (হত্যা মামলা) এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। অপর মামলাটি (বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা) বিচার শেষ হয়নি। এখনো মামলাটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।