The news is by your side.

বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা খুব মিস্ করি:  ঋত্বিকা

0 193

প্রশ্ন: ওয়েব সিরিজ় নিয়ে দীর্ঘ সময় লাগল?

ঋত্বিকা: ওয়েব সিরিজ় নিয়ে একটা দীর্ঘ সময় আমি দোটানার মধ্যে ছিলাম। লকডাউনে এমন কোনও ওয়েব সিরিজ় ছিল না, যেটা আমি দেখেনি। তার পর থেকেই ইচ্ছাটা প্রবল হয়। প্রস্তাবও প্রচুর এসেছে। কিন্তু সত্যি বলতে মনের মতো চরিত্র পাচ্ছিলাম না। তাই এতটা সময় লাগল।

প্রশ্ন: ‘অভিশপ্ত’ তো থ্রিলার। আপনার চরিত্রটার উপর একটু আলোকপাত করবেন?

ঋত্বিকা: চরিত্রটার নাম অপর্ণা। আমার স্বামীর চরিত্রে রয়েছেন গৌরবদা (চট্টোপাধ্যায়)। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কিছু অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয় সে। তার পর রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। অভিদা (সিরিজ়ের পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়) খুব সুন্দর ভাবে গল্পটাকে সিরিজ়ের আকার দিয়েছেন। আশা করি, দর্শকের পছন্দ হবে।

প্রশ্ন: ইদানীং আপনাকে বাংলা ছবিতে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না কেন?

ঋত্বিকা: অনেকগুলো কারণই রয়েছে। এক দিকে তো ওয়েব সিরিজ় করতে চাইছিলাম। পাশাপাশি ভাল ছবির প্রস্তাব পাচ্ছিলাম না। আসলে বাংলা ছবিকে দর্শক কী ভাবে এখন গ্রহণ করবেন সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সঙ্গে চাই প্রচার। সেটা তো একটা ভাল প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া সম্ভব নয়। সকলের উপর তো বিশ্বাস করা যায় না। তাই একটু অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন: আপনি তো দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে এখন অনেক বেশি কাজ করছেন। সেটা কি পারিশ্রমিকের জন্য?

ঋত্বিকা: খুব অল্প বয়সে অভিনয় শুরু করেছিলাম। পারিশ্রমিকের কথা ভাবলে হয়তো কেরিয়ার নিয়ে এতটা মাথা ঘামাতাম না। বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে সারা দেশের মানুষ কথা বলছেন। সেখানে কাজ করা মানে নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ রয়েছে। পারিশ্রমিকের কথা ভেবে আমি দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করছি না!

প্রশ্ন: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে তো এ রকমই বলা হয় যে বাংলায় কাজের সংখ্যা কমেছে বলেই নাকি আপনি দক্ষিণমুখী!

ঋত্বিকা: দক্ষিণে আমাকে মানুষ কিন্তু ‘বেঙ্গলি গার্ল’ নামেই চেনেন। আর আমি সেখানে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করি। এর মধ্যে তো খারাপ কিছু নেই। আমি কিন্তু ডাল-ভাত খাওয়া বাঙালি।

প্রশ্ন: বাংলার সঙ্গে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নজরে এসেছে?

ঋত্বিকা: কাজের ধরন কিন্তু এক। তবে অস্বীকার করব না, টলিগঞ্জে এখন বিশ্বাসযোগ্য প্রযোজকের সংখ্যা কমেছে। নতুন অনেক প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করে তাঁদের মধ্যে চূড়ান্ত অপেশাদার মনোভাব লক্ষ করেছি। সেটা আমি দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি।

প্রশ্ন: আপনি তো এখন স্নাতক স্তরের ছাত্রী। অভিনয়ের সঙ্গে পড়াশোনা ব্যালান্স করছেন কী ভাবে?

ঋত্বিকা: এখন আমি বিবিএ পড়ছি। এর পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছে রয়েছে। অভিনয় এবং পড়াশোনা ব্যালান্স করা খুবই কঠিন। কিন্তু আমাকে সাহস জুগিয়েছেন মা। ছোট থেকেই মা বলতেন, দুটোই একসঙ্গে করতে হবে। শিক্ষকেরাও খুবই সাহায্য করেছেন। ছোট থেকেই আমার বন্ধুর সংখ্যা কম। তবে সব বন্ধু যে সাহায্য করেছে তা নয়। কলেজে শুনেছি, আমি অভিনেত্রী বলে নাকি অনেকেই আমার সঙ্গে কথা বলে না। হয়তো ভয় পায়! আমার কলেজের প্রথম দিনে, অনেক সিনিয়রেরা এসে আমাকে ‘‘দিদি আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে চাই’’— এটাও বলেছে।

প্রশ্ন: অল্প বয়সে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন। তখন বন্ধুবান্ধবদের থেকে কি সমর্থন পেয়েছিলেন?

ঋত্বিকা: আমি ক্লাস সেভেনের পর স্কুল বদলেছিলাম। কারণ তখন ‘বৌ কথা কও’ সিরিয়ালটা চলছে। স্কুলে আমার সঙ্গে কেউ কথা বলত না। বয়স কম ছিল, রীতিমতো অবসাদে ভুগতাম। উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার আগে আমার কোনও অনুরাগী ইন্টারনেটে আমার বয়স পরিবর্তন করে ৩২ বছর লিখে দেয়! তার পর পরীক্ষায় বসতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন আমি বয়স লুকোতে চাইছি। তাই আমার জার্নিটা খুব একটা সহজ ছিল না। যাই হোক, এগুলো আমাকে মনের দিক থেকে অনেকটাই পরিণত করেছে।

প্রশ্ন: ‘আরশিনগর’ ছবিতে আপনার অভিনয় দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন অন্য ধারার ছবিতে আপনি পা রাখতে চলেছেন। কিন্তু সেটা হল না কেন?

ঋত্বিকা: আমি নিজেও জানি না। প্রস্তাব আসেনি। আসলে তখন আমার ১৫ বছর বয়স। অপর্ণা (সেন) ম্যাম ছবিতে আমাকে ওই ভাবেই দেখাতে চেয়েছিলেন। ওই বয়সে ‘আরশিনগর’-এর মতো একটা ছবিতে সুযোগ পাওয়া যতটা ভাগ্যের বিষয়, অভিনয় করা ঠিক ততটাই কঠিন। এখন তো আমার বয়স বেড়েছে। তাই মা বলেন, হয়তো আগামী দিনে ভাল প্রস্তাব আসবে।

প্রশ্ন: ‘বরবাদ’ ছবির মাধ্যমেই আপনি প্রচারের আলোয় আসেন। এখনও ওই ছবিটা নিয়ে মানুষ কথা বলেন।

ঋত্বিকা: শুটিংয়ের সময়ে ততটা বুঝতাম না। শুটিং ফ্লোরে মা শিখিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন কারও সঙ্গে দেখা হলে, তাঁদের থেকে শুনে বিষয়টা বুঝতে পারি। কত দম্পতি আমাকে বলেছেন যে ‘বরবাদ’ দেখে নাকি তাঁরা এক সময় প্রেমে পড়েছিলেন। এখন সুখে সংসার করছেন। কেউ বলেন, সিনেমা হলে সাত বার ছবিটা দেখেছিলেন। ভাল লাগে।

প্রশ্ন: বাণিজ্যিক মসালা ছবিতে কি আপনাকে আর দেখা যাবে না?

ঋত্বিকা: সে রকম ছবি হলে তো দেখবেন! আমি নিজে বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) আঙ্কলের ছবি দেখে বড় হয়েছি। আমি কোয়েলদির (মল্লিক) খুব বড় ভক্ত। কোয়েলদি এবং শ্রাবন্তীদির সব ছবির গল্প, গান আমার মুখস্থ। আজ থেকে ১০ বছর আগে বাণিজ্যিক ছবির নিয়ে দর্শকদের যে উন্মাদনা, সেটাকে খুব মিস্‌ করি। হয়তো আমার মতো আর গুটি কয়েক অভিনেত্রী এই ঘরানার শেষ প্রজন্ম। বাংলা ছবিতে আমি সেটা চাক্ষুষ করতে পেরেছি বলে খুবই গর্বিত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.