পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করার বিষয়ে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এক ঘণ্টার বেশি আলোচনা করেছেন। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় কীভাবে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সহায়তা করতে পারে এবং বাংলাদেশে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করার বিষয়ে আমাদের যে উভয় পক্ষের আগ্রহ, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে।’
আজ রোববার বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লুবাখাররের নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে তাদের বিচার বিভাগ থেকে একটি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে এবং সেটি তারা আমাদের জানিয়েছে।’ নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতা আছে, সেগুলো নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে যে সহযোগিতা আছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রতিরক্ষা চুক্তি জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) ও আকসা (একুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা জিসোমিয়া নিয়ে কাজ করছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন, নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা পাঁচটি পর্যবেক্ষণের কথা আমাদের জানিয়েছে। ওই সব পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং নিষেধাজ্ঞা কীভাবে প্রত্যাহার করা যায়, সেটি নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছে।’
মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন, সেটির উত্তর আমি তাঁকে (রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লুবাখার) দিয়েছি এবং মূল কপিটি ওয়াশিংটনে আমাদের রাষ্ট্রদূত তাঁদের কাছে পৌঁছে দেবেন।’
এ বৈঠক নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে। আমাদের দুই দেশ কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’