The news is by your side.

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেক ক্ষমতাধর দেশের সহযোগিতা পাইনি

0 229

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর দেশ ও সংস্থার কাছে সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে পাননি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশিদের পাশাপাশি বিদেশিদের ষড়যন্ত্রও রয়েছে। তখন বিদেশে সফরকালে তাঁর ভূমিকা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা কিছুই জানেন না বা অপপ্রচার চালান।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও বর্তমানে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন দেশে বড় আঘাত এনেছে। তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

ড. কামাল:  দেশকে আবার পরাধীন করা। তাদের ধারণা ছিল, তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) যদি মেরে ফেলতে পারে, তাহলে দেশকে আবার স্বাধীনতার আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে। তারা এটাও মনে করেছিল, দেশে নেতৃত্বের অভাব হবে। তারা বুঝতে পারেনি যে, বঙ্গবন্ধু তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিতে পরিণত করেছেন, যাতে তাঁর অনুপস্থিতিতেও দেশকে আর কখনও পরাধীন করা সম্ভব নয়। তবে তারা একেবারেই সফল হয়নি, বলা যাবে না। স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে না পারলেও দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। বিভিন্নভাবে ক্ষতি হয়েছে। এরপরও দেশ মোটামুটি একটি জায়গায় দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি তো বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী আগাম কিছুই জানতে পারেনি?

ড. কামাল: কিছু সতর্কতা দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পাত্তা দিতেন না। কোনো বাঙালি তাঁকে মারবে- এটা তিনি বিশ্বাস করতেন না। তাঁর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংকীর্ণ ও ব্যক্তিস্বার্থেই ব্যস্ত ছিল তারা।

প্রশ্ন : গত ৪৭ বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যার রাজনৈতিক অভিঘাত কী দেখেছেন?

ড. কামাল: দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতা সুসংহত করার পথ কঠিন হয়েছে। দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত।

প্রশ্ন : ‘৭২ সালের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি কি অবিকৃতভাবে আর কখনও পুনরুদ্ধার বা তেমন কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ কি সম্ভব? তাতে কোন রাজনৈতিক শক্তি নেতৃত্ব দিতে পারে?

ড. কামাল: এটি সম্ভব। তবে এর জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। চার মূলনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে ঐক্য অপরিহার্য। সেই রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। শুধু প্রয়োজন দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নেতৃত্বের।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিদেশিদের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও আলোচনা আছে। আপনি তো তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, আপনার কাছে কি কোন তথ্য আছে?

ড. কামাল: ষড়যন্ত্র কিছু তো ছিলই। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, তারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। নেপথ্যে শোষক দেশ এবং শক্তির কিছুটা ভূমিকা রয়েছে।

প্রশ্ন : কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যের বিদ্রোহের সময় তৎকালীন সেনাবাহিনীর ভেতর বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা কী করেছেন?  তারা কি সংখ্যায় কম ছিল?

ড. কামাল: সংখ্যায় ভালোই ছিল। কিন্তু সংঘবদ্ধ ছিল না। গভীর ষড়যন্ত্রের কথা জানত না। ভেতরে ভেতরে বিরোধীদের একাট্টা হওয়ার ঘটনা আগাম জানতে পারলে হয়তো প্রতিরোধ করতে পারত।

প্রশ্ন : শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?

ড. কামাল: ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও শোষকদের স্বার্থে অনেকেই ষড়যন্ত্র ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যাঁরা ষড়ষন্ত্রে জড়িত ছিলেন না তাঁরা অপ্রস্তুত ছিলেন। তাঁদের বোঝায় ঘাটতি ছিল। তাঁরা হতবাক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁরাও বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। অবহেলা ও মানসিকভাবে সচেতন না থাকায় এবং নিজেদের নিরাপত্তার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরাও কোনো প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। রক্ষীবাহিনীরও প্রস্তুতি ছিল না। রক্ষীবাহিনীকে সেভাবে গড়াও হয়নি।

প্রশ্ন : ছয় দফা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?

ড. কামাল: বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ও শত্রুদের ব্যাপারে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া বা উপলব্ধি করার কথা ছিল, সেভাবে তিনি করেননি। কোনো শক্তির আক্রমণ এলে পাল্টা আক্রমণের মতো শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করার বিষয়টি অবহেলা করেছেন। প্রতিপক্ষকে গুরুত্ব দিলে এ পরিণতি হতো না। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেন, ‘কোন বাঙালি আমাকে মারতে আসবে?  কেন এত নিরাপত্তা  লাগবে?’

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাে র সময় ইউরোপ সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণায় তেমনই কিছু ইঙ্গিত করেছেন। ওই সময় জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাে র তীব্র প্রতিবাদ ও বিশ্ববাসীকে অবহিত করার মাধ্যমে জনমত গঠনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ড. কামাল: এটা খুবই দুঃখজনক। এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাকে অবহিত করেছি। বিদেশি শক্তিগুলোকে জানিয়েছি, প্রতিবাদ করেছি ও তাদের সমর্থন চেয়েছি। যিনি বা যাঁরা আমার সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ তোলেন, তাঁরা হয়তো জানেন না বা ইচ্ছা করেই অপপ্রচার করছেন। আমার তো দুঃখ আছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোকে অবহিত করা হয়েছিল। এমনকি যাদের কাছ থেকে যে সমর্থন ও সহযোগিতা আশা করেছিলাম তারা সেভাবে পাশে দাঁড়ায়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.