দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধের মতো কোনো ডলার নেই। আমদানির দায় মেটাতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়ে যাচ্ছে এই ব্যাংকগুলো। প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় থেকে আসা ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানির দায় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এসব কারণে ওইসব ব্যাংকগুলো নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ব্যাংক খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ করেছে।
দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সপ্রবাহের প্রায় ৩০ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আবার রপ্তানি আয়ের দিক থেকেও এই ব্যাংকটি সবার শীর্ষে রয়েছে। এই ব্যাংকটিও আমদানি দায় পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায়। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, মাশরেক, এডিসিবি, অ্যাক্সিস ব্যাংকের বেশ কিছু এলসি পরিশোধ করতে পারেনি এই ব্যাংকটি। তাদেরও এলসি মেটানোর ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখতে হয়েছে বিদেশি ব্যাংকগুলোকে। যদিও ব্যাংকটিতে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে তাদের হিসেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিট এক্সচেঞ্জ পজিশনে ৮৮ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত দেখালেও ইসলামী ব্যাংকের হাতে প্রকৃত অর্থে ডলার নেই। এ কারণে এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংকটি তাদের অনশোর ব্যাংকিং থেকে বেশ কিছু ডলার অফশোর ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তর করে বিনিয়োগ করে এ বিপদে পড়েছে বলে জানায় এ কর্মকর্তা।
এলসি পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে স্বীকার করে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা জানান, দেশের কোনো ব্যাংকই চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না। এ কারণে সব ব্যাংকেই কম-বেশি সংকট দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক ইতোমধ্যে অনেক এলসি পরিশোধে বিলম্ব করেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ছাড়াও ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ কমার্জ ব্যাংকের এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকসহ দেশের এক ডজন ব্যাংকের বিরুদ্ধে এলসি দায় বিলম্বে পরিশোধের অভিযোগ করছে বিদেশি ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মে বলা আছে, ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে। এ হিসাবে ঢাকা ব্যাংকের ডলার সংরক্ষণের সীমা ৩০ মিলিয়ন। কিন্তু ব্যাংকটি প্রায় ৬৮ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে বর্তমানে। ডলার সংরক্ষণে সীমার সমপরিমাণ ঘাটতিতে থাকলে সেটিকে স্বাভাবিকভাবে দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা সীমার অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানার বিধান রয়েছে।
ব্যাংক পরিচালকদের মতে, বিদ্যমান ডলার সংকট পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর ভয়াবহতা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের এলসি নেওয়াই বন্ধ করার উপক্রম হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি চৌকস টিম ব্যাংকের খোলা এলসিগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।