The news is by your side.

সালমান শাহ: চলে যাওয়ার ২৪ বছরেও অম্লান যার আবেদন

0 558

 

সালমান শাহ। ঢালিউড চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক,  মরেও যিনি কোটি ভক্ত মনে অমর হয়ে আছেন। শুধু দর্শক নয়, মৃত্যুর দুই যুগ পর এখনো সালমান শাহর অভাব অনুভব করেন  পরিচালক-প্রযোজক এবং অভিনয়শিল্পীরা। ২৪ বছর আগে এই দিনে বিদায় নেন সালমান শাহ।

বাবা-মায়ের দেয়া নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সিনেমা জগতে ‘সালমান শাহ’ নাম নিয়ে অভিষেক হয় তার।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন তিনি। প্রথম ছবিতেই দর্শকের মনে জায়গা করে নেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় সালমানের নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’–এর অফিশিয়াল পুনর্নির্মাণ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। মুক্তি পর দর্শক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল ছবিটি। পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছিল। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন।

নব্বইয়ের দশকে ছোট্ট ক্যারিয়ারে ঢাকাই সিনেমায় বেশ বড় প্রভাব ফেলেন সালমান। স্বল্প সময়ের মধ্যে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। বেশিরভাগ সিনেমাই ব্যবসা সফল ছিল। মৌসুমি-শাবনুরদের সঙ্গে জুটি গড়ে বড় পর্দায়  জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সামিরাকে বিয়ে করেন সালমান শাহ। চার বছর সংসার করে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিরবিদায় নেন তিনি।

সালমান শাহ মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার আগের দিন ৫ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর সঙ্গে তাঁর মা নীলা চৌধুরীর শেষবার কথা হয়। সেদিন ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতি এখনো স্পষ্ট নীলা চৌধুরীর কাছে।

এক সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সালমান শাহর মা। বারবার তিনি শুধু ‘আমার ইমন’ ‘আমার ইমন’ বলতে থাকেন। একটু সময় নিয়ে নীলা চৌধুরী ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতি বলে চলেন।

সেদিন ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সাল। নায়ক সালমান শাহ জীবিত। সেদিনের সেই স্মৃতি স্মরণ করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আগের দিন আমি ইমনকে বলেছিলাম, ইমন, তুমিও আমাদের সঙ্গে সিলেট চলো। তাহলে তোমার একটু বিশ্রাম হবে। দুই–তিন দিন সিলেটে কাটিয়ে আসলে তোমার ভালো লাগবে।

ইমন আমাকে বুঝিয়ে বলল, “মা, এত মানুষের লগ্নি আমার কাছে। বিশ্রাম তো দূরে থাক, আমার মরারও সময় নেই আম্মা। তুমি সিলেট থেকে ঘুরে আসো। পরে তোমাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক যাব। এক মাসের ভ্রমণে যাব। তখন এক মাস শুধুই বিশ্রাম নেব।’”

কথাগুলো একনিশ্বাসে বলেই টেলিফোনের ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। বেশ কিছু সময় কথা বলতে পারেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নীলা চৌধুরী জানান, ‘যে ছেলে আগের দিন বলে মরারও সময় নেই, সেই ছেলে পরের দিন সকালে আত্মহত্যা করে ফেলে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে? ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না। এত কিছু বলার পর কি আমি ঘুমাইতে পারি? ছেলেকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না।’

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় সালমানের। এটি খুন নাকি আত্মহত্যা সেটি আজও রহস্যই রয়ে গেছে। যদিও সর্বশেষ পিবিআইয়ের প্রতিবেদন বলছে পারিবারিক কলহে সালমান আত্মহত্যা করেছেন।  তবে মৃত্যুর এত বছর পরেও তার জনপ্রিয়তার একটুও কমেনি। দিন যাচ্ছে, বছর যাচ্ছে সালমান ততই যেন জনপ্রিয় হচ্ছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে।

আজও ঢালিউডের কোনো নায়ক অতিক্রম করতে পারেননি সালমানের জনপ্রিয়তা। তিনি বেঁচে আছেন ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান, ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘আনন্দ অশ্রু’র মতো ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.