The news is by your side.

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেবা নিয়ে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস

0 741

 

 

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক দরজায় সেবা বা ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার (ওএসএসসি) ১১টি সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করছে।

বেজা জানিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে মোট ১২৫টি সেবা ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের আওতায় আসবে। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংশ্লিষ্ট অনুমোদন পেতে আর বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় দৌড়াতে হবে না। বেজা কোন সেবা কত দিনে দেবে, তাও নির্দিষ্ট করে বিধিমালায় বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে না।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইনে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীদের দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবা না দিলে সেটা তাঁর অদক্ষতা ও চাকরির অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী  বলেন, ‘উদ্বোধনের দিন তিনটি সংস্থার সঙ্গে বেজার সমঝোতা স্মারক সই হবে। এতে পরের এক মাসের মধ্যে আমরা ৪২টি সেবা অনলাইনে দিতে পারব।’ তিনি বলেন, এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ সেবা বেজার ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার থেকে দেওয়া হয়। যদিও অনলাইনে নয়। বিনিয়োগকারীদের অন্য সংস্থায় যেতে হয় না।

ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের ভিসা সুপারিশপত্র, বিনিয়োগ ছাড়পত্র, কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট, আমদানি অনুমোদন, রপ্তানি অনুমোদন, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প নিবন্ধন, স্থানীয় বিক্রিতে অনুমতি, স্থানীয় ক্রয়ের অনুমতি ও নমুনা আমদানি অনুমতি অনলাইনে দিচ্ছে বেজা। সংস্থাটি জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে।

 

কোন সেবা কত দিনে

বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসাসূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস অনুযায়ী দেশে কিছু কিছু সেবা পেতে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ সময় লাগে। যেমন কারখানার ভবন নির্মাণের অনুমতি পেতে সময় লাগে ২৮১ দিন। বেজার ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে ভবন নির্মাণসংক্রান্ত পাঁচ ধরনের অনুমোদন মিলবে ৭ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। একইভাবে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ১৪৮ দিন লাগে। বেজা বলছে, তারা বিদ্যুৎ-সংযোগ সংক্রান্ত তিনটি অনুমোদন দেবে ৭ থেকে ১৪ দিনে।

কারখানা বন্ড লাইসেন্স ২২ দিনে, গ্যাস-সংযোগ ৭ দিনে, বিস্ফোরক লাইসেন্স ২১ দিনে, জমির নামজারি ১৫ দিনে ও পরিবেশ ছাড়পত্র ৭ থেকে ৩০ দিনে দেবে বেজা। এর বাইরে বিনিয়োগ নিবন্ধন, নামের ছাড়পত্র, কর-সংক্রান্ত নিবন্ধন, ভিসার সুপারিশ, কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি সাধারণ সেবা কত দিনে দেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইনের বেজার বিধিমালায়। সব মিলিয়ে ১২৫টি সেবারই সময় উল্লেখ আছে।

বিনিয়োগকারীদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণ করে সেবা প্রদান করা হয়। বেজা জানিয়েছে, ১২৫টির মধ্যে বেজা নিজে দেবে ৩৭টি সেবা, যার ২২টির এসওপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্যান্য দপ্তর দেবে ৮৮টি সেবা, যার ৫২টির এসওপির অনুমোদন পাওয়া গেছে।

অনীহা দূর করার চ্যালেঞ্জ

বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস বিলুপ্ত বিনিয়োগ বোর্ডেও ছিল। তবে সেখানে নির্দিষ্ট সময়ে সেবা পাওয়া কঠিন ছিল। কারণ, বিনিয়োগ বোর্ড চাইলেও বাকি সংস্থাগুলো নানা অজুহাতে দ্রুত সেবা দিত না। দ্রুত সেবা দিতে বাধ্য করতে বেজা ২০১৫ সালে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইন করার প্রস্তাব দেয়। পরে বেজার পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থায় এ সেবা দিতে সার্বিকভাবে আইন করার উদ্যোগ নেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এখন বেজার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এ আইনের অধীনে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস নিয়ে কাজ করছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ওয়ান–স্টপ সার্ভিস বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে, এটাই বড় কথা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়লে বাংলাদেশ আরও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পাবে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য সংস্থার সেবা বেজার মাধ্যমে অনলাইনে দিতে হলে ওই সব সংস্থাকে সংযুক্ত বা ইন্টিগ্রেটেড করতে হবে।

বেজায় ওয়ান–স্টপ সার্ভিস চালু করতে সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। সংস্থাটির বিনিয়োগ উৎসাহ ও শিল্পসক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেজায় ওয়ান-স্টপ সার্ভিস উদ্বোধন একটি ইতিবাচক ঘটনা। তবে সাধারণ কয়েকটি সেবার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো তাড়াতাড়ি চালু করাটা জরুরি। তিনি বলেন, যেহেতু সময়মতো সেবা না দিলে জবাবদিহি করতে হবে, সেহেতু অন্যান্য সরকারি সংস্থায় ওয়ান স্টপ সার্ভিসে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকতে পারে। তাদের কত তাড়াতাড়ি যুক্ত করে সেবার আওতা বাড়ানো যায়, সেটাই দেখার বিষয়।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.