The news is by your side.

ঐতিহাসিক অন্যায় আচরণের জন্য কি কোন রাষ্ট্রের ক্ষমা চাওয়া উচিত?

0 689

 

স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ আর ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের কাছে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখেছেন এমন আহবান জানিয়ে যে তাঁরা যেন আমেরিকার দুই মহাদেশ দখল করার সময় ঘটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চান

অনেক অনেক বছর আগে ঘটা কোন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে এই প্রথম অবশ্য কোন দেশ কিংবা কোন জনগোষ্ঠীকে আহবান জানানো হয়নি।

দৃষ্টি ফেরানো যাক কোন দেশ কখন এবং কেন এমনভাবে ক্ষমা চেয়েছিল।

দাসপ্রথা এবং জাতিগত পৃথকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমা প্রার্থণা

দাসপ্রথার বিষয়ে দুটো সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুঃখ প্রকাশ করেছিল – ২০০৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদে একবার এবং ২০০৯ সালে সেনেটে আরেকবার।

কংগ্রেসের এই দুটো কক্ষই মার্কিন জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আফ্রিকান আমেরিকানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তাদের এবং তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দাসপ্রথা ও এর পরবর্তীতে দশকের পর দশক ধরে চলা পৃথকীকরণ নীতির আওতায় যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তার জন্য।

এই ক্ষমা প্রার্থণার ঘটনায় খুব সামান্যই বিরোধীতা হয়েছে। তবে কংগ্রেসের দুটো কক্ষ কেবল একটি মাত্র সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে একমত হতে পারেনি – অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি কিছু দ্বিমতকে সামনে নিয়ে এসেছে।

সেনেটের প্রস্তাবে এমন একটি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে দাসপ্রথা এবং জাতিগত পৃথকীকরণের কারণে এটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাইতে ব্যবহার করা যাবে না।

তবে এটির বিরোধীতা করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাসের কিছু সদস্য, যারা ক্রীতদাসদের উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ওই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। তিনি কংগ্রেসের ক্ষমা প্রার্থণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, কিন্তু দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কখনোই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আহবান জানাননি।

মি. ওবামার পরিবারের সঙ্গে দাসপ্রথার ইতিহাসের সংযোগ রয়েছে। তাঁর শ্বেতাঙ্গ মায়ের পরিবারের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে তাদের দাসের মালিকানা এবং দাস – এই দুইয়ের সঙ্গেই সংশ্লিষ্টতা ছিলো। অন্যদিকে তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ পিতা দাসপ্রথা শেষ হওয়ার অনেক পরে আমেরিকায় আসেন। ফলে এটি প্রমাণ করে যে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বেশ জটিল একটি ব্যাপার।

সুতরাং ক্ষতিপূরণ যদি দেওয়া হয়, তাহলে কে তা দেবে আর কেই-বা পাবে?

ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও আসা উচিত – এই ধারণার কারণে অনেক নেতাই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষে ব্রিটেনের ভূমিকা

আইরিশ দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল ১৮৪৫ সালে। এর ১৫০ বছর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন: “সে সময় যারা লন্ডন থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করছিলেন, তারা আসলে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।”

ওই দুর্ভিক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলো, আর দেশত্যাগ করেছিলো ২০ লক্ষ আইরিশ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, দেশটিতে তখন আলু উৎপাদনে ধস নামলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট খাদ্য আমদানীতে চালু থাকা বিধিনিষেধ তুলে নিতে দেরী করে।

টনি ব্লেয়ারের ১৯৯৭ সালে দেওয়া বক্তব্য এমন একটি সময় আসে যখন যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছিল। ১৯২২ সাল পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ ছিলো, তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক পরে চরম তিক্ততায় গড়ায়।

সমস্যা সমাধানে দেশ দুটো এরপর ‘গুড ফ্রাইডে চুক্তি’ করে।

সমালোচকরা অবশ্য বলছেন যে মি. ব্লেয়ারের কথাগুলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ, আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থণা হিসেবে নেয়া যায় না।

যদিও দুর্ভিক্ষের কারণে আয়ারল্যান্ডকে কখনোই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, তবে যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত কিছু মানুষকে অর্থ দিয়েছে।

এদিকে, ১৯৫০-এর দশকে কেনিয়ার মওমও বিদ্রোহের সময় যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, ব্রিটিশ সরকার ২০১৩ সালে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তাদের জন্য আড়াই কোটি মার্কিন ডলারের একটি ক্ষতিপূরণ প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়।

হলোকাস্টের জন্য পশ্চিম জার্মানীর ক্ষতিপূরণ

অন্যদের তুলনায় এক্ষেত্রে পশ্চিম জার্মানী বেশ দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই নাৎসী জার্মানীর কৃতকর্মের জন্য পশ্চিম জার্মানী ক্ষতিপূরণ দিতে রাজী হয়।

১৯৫১ সালে চ্যান্সেলর কনরাড অ্যাডিনয়ের বলেন: “জার্মান জনগণের নামে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এমন অপরাধ ঘটনো হয়েছে, যা নৈতিক ও বস্তুগত খেসারত দেয়ার দাবী রাখে।”

ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং হলোকস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের অর্থ দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৩ সালে। সব মিলিয়ে দেয়া হয়েছে ৭,০০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশী।

তবে হলোকস্টের শিকার অনেকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন।

বিরোধীরা বিশ্বাস করেন, পশ্চিম জার্মানীর কাছ থেকে ইসরায়েলের অর্থ নেয়ার বিষয়টি অপরাধের জন্য নাৎসীদের ক্ষমা করে দেওয়ার সামিল।

ইহুদি শরণার্থীদের ইউরোপ থেকে ইসরায়েলে পুনর্বাসিত করার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেশটিকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। ওই অর্থের একটি অংশ প্রথম দিকে ইসরায়েলকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিলো।

দুঃখিত বলার সংগ্রাম

অন্য অনেক দেশ অবশ্য এতোটা দৃঢ়সংকল্প হতে পারেনি।

জাপান যদিও দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ সম্বলিত চুক্তি সই করেছে, তারপরও নিকট প্রতিবেশী এই দুটো দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের প্রায়ই অবনতি ঘটে।

জাপান যুদ্ধের সময় “আগ্রাসী” ছিলো কি-না, সেই ব্যাপারটিতে স্পষ্ট কোন বক্তব্য না দেয়ার কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শিনজো আবে এমন একটি মন্দির পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে অর্ঘ্য পাঠিয়েছেন, যেটি আরও কিছু বিষয়ের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদেরও সম্মানিত করে।

তবে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার ওইসব নারীদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে রাজী হয়েছেন, যাদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী সেনারা যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে।

আরও অনেক রাজনীতিবিদদের মতো মি. আবে পরস্পরবিরোধী দাবীর মধ্যে সমতা আনতে বেগ পাচ্ছেন, যেখানে দেশের মধ্যে জাতীয়তাবাদী অনুভূতির বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে আবার ভালো সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.