The news is by your side.

ধর্ম বিশ্বাস কী ভয়ংকর হলে এভাবে বাঁচতে পারে মানুষ!

0 705

 

 

 

তসলিমা নাসরিন

গিয়েছিলাম পেন্সিলভেনিয়ার আমিশদের জীবন যাপন দেখতে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ আমিশ বাস করে উত্তর আমেরিকায়। এরা জ্যাকব আম্মান নামের এক ক্রিশ্চান গুরুর অনুসারী। গুরু ১৬৯৩ সালে ক্রিশ্চান বাইবেল মেনে জন্ম দিয়েছিলেন এই ক্রিশ্চান চার্চের । বাচ্চা বয়সে বাপ্টিজম না করে আদেশ দিলেন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বাপ্টিজম করার। এই সুইস- জার্মান এনাবাপ্টিস্ট দল অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছিলো আমেরিকায়।

যে কোনও ধর্ম, প্রচলিত ধর্ম থেকে সে যত ভিন্নই হোক, পালনের স্বাধীনতা দেবার জন্য আমেরিকা তখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইউরোপ থেকে দলে দলে ধর্মের ভিন্নতার জন্য যারাই অত্যাচারিত হতো, চলে আসতো। আমিশরাও চলে এসেছিল। এরা বিশ্বাস করে ঈশ্বর এদের সাধারণ জীবন যাপন করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তাই এরা আজও এই একবিংশ শতকের আধুনিক পৃথিবীতে কোনও ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করে না, ঘরে কেরোসিনের বাতি জ্বলে, কোনও মোটরগাড়ি ব্যবহার করে না, ঘোড়ার গাড়ি চালায়। সেই সতোরো শতাব্দির কালো গাউন আজও পরে মেয়েরা, ছেলে মেয়ে কারো পোশাকে বেল্ট ব্যবহার করে না। কারণ মিলিটারিরা বেল্ট ব্যবহার করে, মিলিটারিরা গোঁফ রাখে বলে আমিশ পুরুষেরা গোঁফ রাখে না। এরা যুদ্ধে বা ভায়োলেন্সে বিশ্বাস করে না। এরা কোনো রেডিও, টেলিভিশন, কোনও বাদ্যযন্ত্র, কোনও, কম্পিউটার, বা ফোন ব্যবহার করে না। ঘোড়া আর লাংগল চালিয়ে চাষাবাদ করে।

ফেইথ, ফ্যামিলি, ফার্মিং — এই আদর্শ গভীর ভাবে মানে। এদের অঞ্চলের বাইরে এরা যায় না, বাইরের স্কুল কলেজে পড়ে না। আইডি কার্ড বলে কিছু রাখে না, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড নেই এদের, এরা চায় না। হেলথ ইন্সুরেন্স নেই কারো। এরা নিজেদের এক রুমের আমিশ স্কুলে এইট পাস করা শিক্ষকের তত্তাবধানে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ে। ব্যস। বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভুগোল কিছুই পড়ানো হয় না। শুধু ভাষা, ধর্ম, আর বেসিক অংক। এইটের বেশি পড়া বারণ তাদের। সেই কতকাল আমেরিকায়, এরা আজো হাই জার্মান ভাষায় বাইবেল পড়ে, ইংরেজিতে বাইবেল পড়া এদের জন্য পাপ। এরা আসলে বাইবেল পড়ে না, বাইবেল যাপন করে। কথা বলে পুরোনো জার্মান ভাষায় । এরা ফসল ফলায়, খায়, বিক্রি করে, চলে। এরা ছ’ সাতটি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরা ফটো তোলে না, ফটো তুললে নাকি পাপ হয়।সিরিয়াসলি।

নিচের ছবিগুলোয় দেখা যাচ্ছে জামা কাপড় এরা বাইরে শুকোচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বাড়ির সামনে ঘোড়ার গাড়িগুলো দাঁড় করানো। রাস্তায় চলছে ঘোড়ার গাড়ি, যাকে এরা বাগি বলে। ২০১৯ সালে ক্ষেতে চাষ হচ্ছে প্রাচীন পদ্ধতিতে। এরা ট্রাক্টর ব্যবহার করবে না। কারণ নতুন টেকনোলজি এলে এদের সিম্পল জীবন আর সিম্পল থাকবে না। ঈশ্বর অখুশি হবেন। কেউ কোনও অপরাধ করলে এরা আদালতে বিচার চাইতে যায় না। কারণ এরা মনে করে ঈশ্বর অপরাধ করিয়েছেন। মানুষের তৈরি আইনে এরা বিশ্বাস করে না। এরা আক্ষরিক অর্থে বাইবেলের এই বাণীটি বিশ্বাস করে, তোমাকে কেউ এক গালে চড় মারলে, আরেক গাল বাড়িয়ে দেবে।

কেউ যদি আমিশ জীবন যাপন না করে, তাদের আমিশ সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। একবার আমিশ চার্চের সদস্য হওয়ার পর আমিশ জীবন ত্যাগ করলে আমিশ সমাজে আর ফেরত আসা যায় না। আমিশে আমিশে বিয়ে হয়, বিয়ে বিশপ দেয়, তবে কোনও তালাক বলে ব্যাপার নেই আমিশদের মধ্যে। আমিশ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করলেও আমিশ সমাজ ত্যাগ করতে হয়।

আমিশরা বিশ্বাস করে আমিশ জীবন ত্যাগ করলে তারা নরকে যাবে। আমিশ জীবন মানে, আধুনিক জীবন যাপন না করা, ক্ষেতে কাজ করা, ফসল ফলানো, ঘোড়ার গাড়ি চালানো, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, পরিবারের দেখভাল করা,পৃথিবী থেকে দূরে থাকা। এদের দেখলে অবাক লাগে, ধর্ম বিশ্বাস কী ভয়ংকর হলে এভাবে বাঁচতে পারে মানুষ!

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.