The news is by your side.

খেলাপী ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছে সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক

0 775

শারমিন আজাদ

 

সরকারি বেসরকারি ব্যাংক নুয়ে পড়েছে খেলাপী ঋণের ভারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে গতবছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ হয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের চেয়ে বড়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর শতাংশ ১০ দশমিক ৩০। এর আগের বছরের চেয়ে এ অংক বেশি। এর সঙ্গে গত বছরের পুন:তফসিলকৃত ঋণ যোগ করলে ব্যাংকিং খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের হার ২২ শতাংশের বেশি।২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা জাতীয় বাজেটের এক চতুর্থাংশের বেশি। এই ঋণের ৪৩ শতাংশ খেলাপি রয়েছে রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। তার সাথে পুরনো খেলাপি ঋণ যোগ হয়। এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। তবে ডিসেম্বরে অনেক ব্যাংকের ঋণ আদায় ভালো হয়। সেসময় অংকটা কমে আসে। ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে তাগাদা দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

এদিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আদায়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, তাদের খেলাপি ঋণের হার ২৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এজন্য তাদের ঋণ আদায়ের নিয়ন্ত্রণই কার্যকর হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদেও শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন একেিদক উদ্দেশ্যমূলভাবে অস্বাভাবিক ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন আর অন্যদিকে সৎ ব্যবসায়ী অনেক কারণে ব্যবসায় ক্ষতিতে পড়ে খেলাপি হতে পারেন। যারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হচ্ছেন সেসব ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে অনিচ্ছুক ব্যাংকগুলো। তাদের টেনে না তোলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এক্ষেত্রে তিনি আরো বলেন, অগ্রণী, জনতাসহ সরকারি ব্যাংকগুলোকে সরকার মূলধন সরবরাহ করছে অথচ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পাশে কেউ দাঁড়ান না।  অন্যদিকে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ৬ বছরে ১ লাখ ৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুন তফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। এর মতে রেকর্ড পরিমাণ পুন: তফসিল করা হয়েছে ২০১৮ সালে। পুন:তফসিলের অংকটা ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকার। এর আগে ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২০ কোটি আর ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পুন:তফসিল করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে বিশেষ বিবেচনায় পুনর্গঠন করা হয়েছিল ১১ শিল্প গ্রæপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এত পুন: তফসিলের পরও কমছে না খেলাপি ঋণের বিরাট অংক।

আইএমএফ এর তথ্যে উঠে এসেছে, ২০১৩ সাল শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সেবছর পুন:তফসিল ও পুনর্গঠনকৃত ঋণ ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে দুর্দশাগ্রস্থ ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরো অনেক বেশি। বেশকিছু ব্যাংক বড় অংকের ঋণ আদায় করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও এতে নজর দিচ্ছে না। তাছাড়া শেয়ারবাজারে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলো নানা ছাড় দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকের প্রকৃত তারল্য পরিস্তিতিও থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা যা গত জুনে ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রæপের তারণে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর একই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এই সময়ে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের অর্থাৎ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৭ শতাংশ।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.