The news is by your side.

আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান নেতা বাগদাদি কুকুরের মতো মরেছে: ট্রাম্প

0 632

 

 

 

মার্কিন প্রতিরক্ষা সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি গত কাল সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশের বারিশা এলাকায় এক অভিযানে নিহত হয়েছেন। বেলা গড়াতে সে খবরে সিলমোহর দিয়ে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘কাপুরুষ বাগদাদি কুকুরের মতো মরেছে।’’ মার্কিন বাহিনীর নাগাল এড়াতে আল-বাগদাদি আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

রবিবার সকালে হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘গত রাতে বিশ্বের এক নম্বর জঙ্গিনেতাকে দু’ঘণ্টার অভিযানে মেরে ফেলেছে মার্কিন বাহিনী। আবু বকর আল-বাগদাদি মৃত। সে আইএস গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা ছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও হিংস্র প্রতিষ্ঠান ওটা। আমেরিকা বহু বছর ধরে বাগদাদিকে খুঁজছিল। জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমার প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল, বাগদাদিকে ধরা বা মেরে ফেলা।’’

২০১১-র ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে আল কায়দা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। আজ ট্রাম্পের ‘সাফল্যের’ পরে স্বভাবতই সে দিনটির সঙ্গে তুলনা উঠছে। কোনটা বেশি বড় অভিযান, কার কৃতিত্ব বেশি— সে তর্কে জল ঢেলে ট্রাম্পের দাবি,  ‘‘বিন লাদেন বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু ৯/১১-র আগে তাকে কে চিনত! আর এই লোকটা (আল-বাগদাদি) নিজেই একটা সাম্রাজ্য তৈরি করেছিল, যেটাকে েস মনে করতেন একটা দেশ। তাই এটা বিন লাদেনের চেয়েও বড়সড় ব্যাপার।’’ তাঁর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে অনেকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার কৃতিত্ব খাটো করতেই এমন তুলনা টেনেছেন ট্রাম্প।

 

শনিবারের অভিযান-পর্বের অনেকটাই তিনি দেখেছেন দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘গভীর রাতে প্রচুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মার্কিন বাহিনী অভিযানে শামিল হয়েছিল। অভিযানের অনেকটাই দেখেছি। আমাদের অফিসারেরা প্রাণ হারাননি। আল-বাগদাদির সঙ্গী ও যোদ্ধাদের অনেকে মারা পড়েছে।’’ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বাগদাদি তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকেছিলেন। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ওই তিন শিশুরও। তবে কারও কারও বক্তব্য, বাচ্চাগুলি অক্ষত আছে। অভিযানের বর্ণনা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘মার্কিন বাহিনীর তাড়া খেয়ে চিৎকার করতে করতে একটা বন্ধ-মুখ সুড়ঙ্গে দৌড়ে ঢুকে পড়েন আল-বাগদাদি। ওই চত্বরটা তত ক্ষণে ফাঁকা করে দিয়েছে আমাদের কপ্টারগুলো। সেখানকার একটি বাড়ি থেকে ১১টি শিশুকে অক্ষত উদ্ধার করেছে তারা। তবে বাগদাদির তিন সন্তান তাঁর সঙ্গেই ছিল। তারা এবং বাগদাদির দুই স্ত্রী মারা পড়েছে। আমাদের কুকুরের তাড়া খেয়ে বাগদাদি সুড়ঙ্গের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। তার পরেই আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে নিজেকে উড়িয়ে দেন তিনি। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। তারও ১৫ মিনিট পরে সেখানেই দেহাংশ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়, ওটা বাগদাদিরই।’’

 

আঞ্চলিক মুখপত্র আল-ফুরকান দাবি করে, ওই ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনিই বাগদাদি। ২০১৪-য় ইরাকের মসুলে আল নুরি মসজিদে (‘গ্রেট মস্ক’ বলেও যা পরিচিত) শেষ বার তাঁকে কালো পোশাকে দেখা যায়। সেখান থেকেই স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু ইসলামি রাষ্ট্র (খিলাফত) তৈরির কথা ঘোষণা করেন। ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে শুরু হয় আইএসের নতুন জমানা।

২০১৭ সালে আল নুরি পুনর্দখল করে ইরাকি সেনা। আইএস তত দিনে অনেকটাই কোণঠাসা। তার আগেই ২০১৫ সালের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, আল বাগদাদি এক মার্কিন  অভিযানে গুরুতর জখম হয়েছেন। কেউ কেউ সেই সময়ে দাবি করেন, ওই শীর্ষ জঙ্গিনেতা শয্যাশায়ী। যদিও পেন্টাগন তখন সে খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি। ২০১৭ সালে ফের তাঁর জখম হওয়ার খবর আসে। বলা হয়, সিরিয়ায় আইএসের এলাকায় মার্কিন বাহিনী অন্যদের সঙ্গে মিলে তাঁকে কাবু করেছে। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে আবার আমেরিকা জানায়, ২০১৭-র মে মাসে আকাশপথে হানার জেরে আল-বাগদাদি আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁর মাথার দাম ছুঁয়েছে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার, ভারতীয় মূল্যে প্রায় ১৭৭ কোটি টাকার কাছাকাছি।

ইরাকের বাসিন্দা আল-বাগদাদি ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই)-এর নেতা হন ২০১০-এ। আল কায়দা সমর্থিত এই জঙ্গিগোষ্ঠী সিরিয়ায় ২০১৩ সালে আল কায়দার সঙ্গে মিশে নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব ঘোষণা করে। বাগদাদি জানান, গোষ্ঠীর নয়া নাম— ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত (সিরিয়া)। সেই থেকে শুরু আইএসআইএল-এর, পরে যা আইএস বলে পরিচিত হয়। বিমান ছিনতাই বা গণ-বিধ্বংসী অন্য হামলার পথ ছেড়ে ছোট ছোট অভিযানে উস্কানি দিতেন বাগদাদি। খিলাফত পর্যন্ত যে জঙ্গিরা পৌঁছতে পারত না, তাদের বাগদাদির বার্তা ছিল, ‘যেখানেই থাকো, হাতে যে অস্ত্র থাকুক, তা-ই দিয়েই মারো।’ ব্রিটেন-সহ ইউরোপের অনেক জায়গা জুড়ে শুরু হয় পর পর হামলা। মাথা কেটে হত্যা— যার অন্যতম নজির। ছিল আরও হিংস্র নানা পথ।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.